Oct 23, 2017

Ronaldo: remember the name

"Some people hate me... some people love me. I was made to be the best. Your love makes me strong, your hate makes me unstoppable." - Cristiano Ronaldo


"গোওওওওওওওওওললললল...... ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো.... রিমেম্বার দ্যা নেম!!!!!!!!"
পর্তুগালের মাদেইরা নামক ছোট্ট শহরে ১৯৮৫ সালের ৫ ই ফেব্রুয়ারি এক ছেলের জন্ম। জন্মের আগেই ছেলেটি মুখোমুখি হয়েছিলো পৃথিবীর নিষ্ঠুরতার সাথে। দরিদ্র পরিবারের বাবা-মা চাননি তাদের অনাগত সন্তান আলোর মুখ দেখুক। কারণ এমনিতেই পরিবারে এসেছে অনেকগুলো সন্তান, বাবা আর পারছে না এতোগুলো মুখের খাবার জোগাড় করতে। তবু মা'র ইচ্ছাতেই আর এবোরশন করা হলো না। পৃথিবীতে আগমন ঘটলো ছেলেটির। নাম রাখা হলো 'ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো দস সান্তোস এভেইরো'। নাহ ব্রাজিলের বিখ্যাত স্ট্রাইকার রোনালদো লিমার নামে নয় বরং তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের নামেই ছেলের নামকরণ করেন বাবা। মনের ইচ্ছা যে ছেলে তার নামের মতোনই একদিন পৃথিবী বিখ্যাত হবে। ক্রিশ্চিয়ানো তা হয়ে দেখিয়েছনও। কৈশোরে দারিদ্র‍্যের জন্য মাদেইরার রাস্তা-ঘাট ঝাড়ু দিতে হয়েছে যাকে সেই ক্রিশ্চিয়ানোই মাত্র ১৮ বছর বয়সে খেলেছেন বিশ্ববিখ্যাত ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। এর আগে মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবা-মা'কে ছেড়ে পাড়ি জমাতে হয় লিসবনে, স্পোর্টিং সিপির হয়ে খেলার জন্য। সেখানেই রোনালদোর খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে ইউনাইটেডে ভেড়ান স্যার এলেক্স ফার্গুসন। গুরুর সিদ্ধান্তের যোগ্য প্রতিদানও দিয়েছেন শিষ্য। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে মাত্র ৫ বছরের মাথায় জিতেছেন সবকিছু। ২০০৯ সালে রেকর্ড ট্রান্সফার ফি'র বিনিময়ে যখন রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন তখন রোনালদোর ঝুলিতে রয়েছে বেশ কটি প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা, প্রিমিয়ার লীগে এক সিজনে সবচেয়ে বেশি গোল করা আর বেস্ট প্লেয়ার হওয়ার রেকর্ড, উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ, ব্যালন ডি'অর আর ফিফা বেস্ট প্লেয়ার এওয়ার্ড।
রিয়াল মাদ্রিদের বিখ্যাত স্টেডিয়াম বার্নাব্যুতে সকল মাদ্রিদিস্তার 'ক্রিশ্চিয়ানো..ক্রিশ্চিয়ানো..ক্রিশ্চিয়ানো' ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে পা রাখেন ইতিহাসের সেরা ক্লাবে। কিন্তু যখন রোনালদো রিয়ালে যোগ দেন তখন স্পেনের আরেক প্রান্ত বার্সেলোনাতে উত্থান ঘটেছে আরেক ফুটবল জাদুকরের। নাম তার লিওনেল মেসি। মেসির হাত ধরেই সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছে যায় বার্সা। আর এদিকে লীগে আর ইউরোপিয়ান কম্পিটিশনে ধুকতে থাকে রিয়াল।
তবু রোনালদো দমে যাননি। জন্মের আগে থেকেই যার সাথে পৃথিবীর নির্মমতার পরিচয় ঘটেছিলো সে তো আর এতো সহজে দমতে পারে না। তবু ক'জনই বা পারে টানা ৪ টা বছর ফিফা গালার সামনের সারিতে বসে নিজের রাইভালকে ৪ বার ব্যালন ডি'অর জেতা দেখতে। আপনি আমি হলে হয়তো সহ্যই করতে পারতাম না। হতাশায় খেলাটাই ছেড়ে দিতাম। কিন্তু রোনালদো যে অন্য ধাতুতে গড়া।
১৯৮৫ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত রোনালদোর ক্যারিয়ার, জীবন আর পরিবার নিয়ে নির্মিত মুভি 'Ronaldo' . পরিচালনা করেছেন এন্থনি ওংকে। মুভিতে তুলে ধরা হয়েছে রোনালদোর সংগ্রামী ক্যারিয়ার, তুলে ধরা হয়েছে বিশ্বের সর্বকালের সেরা এক রাইভালরির গল্পকে।
'Ronaldo' মুভি শুধু এক ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানোর গল্প নয়, বরং এক বাবা ক্রিশ্চিয়ানোর গল্প, এক সন্তান ক্রিশ্চিয়ানোর গল্প। যুবক বয়সেই বাবাকে হারান রোনালদো। বাবার তেমন আদরই পাননি। তাই ২০১০ সালে যখন বাবা হোন তখন যেনো নিজের মন-প্রাণ ঢেলে মানুষ করতে থাকেন নিজের সন্তান রোনালদো জুনিয়রকে। ফুটবলের পর 'Ronaldo' মুভিতে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে এই বাবা-ছেলের সম্পর্ককেই। নিজের পরিবারই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ রোনালদোর কাছে। মা, ভাই, বোন এমনকি নিজের এজেন্ট হোর্হে মেন্ডেসকে নিয়ে সবসময় একত্রে থাকতে পছন্দ করেন।
মুভিতে দেখানো হয়েছে কিভাবে বারবার ফিফা গালা থেকে ব্যর্থ মনোরথে ফিরে এসে নিজের পরিশ্রমকে আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। শেষ-মেশ তার ফলও পেয়েছেন। ২০১৩, ২০১৪ টানা দুইবার লিওনেল মেসিকে হটিয়ে ফিফা ব্যালন ডি'অর পান। এর মধ্যে ২০১৪ তে রিয়ালকে জেতার দশম উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ, স্বপ্নের লা ডেসিমা। রোনালদোর হাত ধরেই যেনো আবার জেগে ওঠে এক সময়কার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। প্রায়ই অনেক সময় বলা হয়, একজন খেলোয়াড় ক্লাবে যতোটা উজাড় করে খেলেন ততোটা নিজ দেশের হয়ে খেলেন না। রোনালদোর ক্ষেত্রে একথাটা পুরোপুরি মিথ্যা হয়ে যায়। নিজের পায়ের ইঞ্জুরি থাকা সত্বেও দেশের জন্য খেলতে যান ২০১৪ এর ওয়ার্ল্ড কাপ। ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, সেই সময় পা-এর কোনো ক্ষতি হলে শেষ হয়ে যেতে পারে রোনালদোর ক্যারিয়ার। তবু তিনি গিয়েছেন বিশ্বকাপ খেলতে, রোনালদোর কাছে যে দেশ সবার আগে।
যেকোনো ফুটবলপ্রিয় দর্শকের জন্য 'Ronaldo' মুভিটি ওয়ান কাইন্ড অফ ট্রিট। একজন সাধারণ দর্শকও দেখতে দেখতে অবাক হয়ে যাবেন যে কিভাবে মাদেইরার এক ঝাড়ুদার বালক জয় করেছে পুরো বিশ্বকে। <3 span="">
ফুটনোট ১: মুভিটি যেহেতু ২০১৫ এর শেষদিকে রিলিজ পেয়েছে তাই ২০১৫ পর্যন্তই রোনালদোর ক্যারিয়ারের এচিভমেন্ট গুলি দেখানো হয়েছে। এর পরে ২০১৬ আর ২০১৭ সালে রিয়ালকে আবারো তিনি জেতান উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ। দু'বারই তিনি হোন সর্বোচ্চ গোলদাতা। ২০১৫ তে মেসির কাছে ব্যালন ডি'অর হারলেও আবার ২০১৬ তে রোনালদো লাভ করেন নিজের চতুর্থ ব্যালন ডি'অর আর 'ফিফা দ্যা বেস্ট'। হয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লীগের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবে এতোকিছুর উপরেও ক্রিশ্চিয়ানোর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন ২০১৬ এর ইউরো। যা তাকে অনন্য করেছে নিজের রাইভাল মেসি থেকে। ৩ গোল আর ৩ এসিস্ট করে ফাইনাল পর্যন্ত একাই টেনে তোলেন দলকে। ফাইনালে মারাত্নক ইঞ্জুরিতে পড়ে ২০ মিনিটের মাথায় মাঠ ছাড়তে হয়। তবু ডাগ-আউট থেকে দলকে উজ্জিবীত করে যান। শেষ-মেশ এডারের গোলে পর্তুগাল পায় নিজেদের প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা। ২০০৪ সালের ইউরো ফাইনালে গ্রিসের কাছে হেরে ফিগোর কাঁধে কান্না চেপে মাঠ ছাড়তে হয়েছিলো ১৯ বছর বয়সী এক তরুণের। সেই তরুণটিই ২০১৬ সালে ৩১ বছর বয়সে মাথায় ইউরোর শিরোপা চড়িয়ে ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে পোজ দিতে দাঁড়িয়ে যান। একেই বলে হয়তো ভাগ্য। আজ রোনালদোর জীবনের পাশার দান উলটে গেছে। মেসির সাথে রোনালদোর ব্যালন ডি'অর এর ব্যবধান ছিলো যেখানে ৪-১ সেখান থেকে তা ৫-৪ করেছেন। খুব শীঘ্রই সামনের ডিসেম্বরে নিজের পঞ্চম ব্যালন ডি'অর টি জিতে কামব্যাক সম্পন্ন করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আগে পাঠ্যবইয়ে পড়ানো হতো রবার্ট ব্রুস আর মাকড়শার গল্প। এই রোনালদো যেনো সেই রবার্ট ব্রুসেরই আরেক রূপ। এই রোনালদো মোটিভেশন আর ঘুরে দাঁড়ানোর আরেক নাম।
ফুটনোট ২: কিছুক্ষণ আগে নিজের ক্যারিয়ারে পঞ্চমবারের মতো ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। সে উপলক্ষেই একজন সামান্য রন ফ্যান হিসেবে আমার এই ট্রিবিউট পোস্ট। :)

No comments:

Carlo Cipolla's Laws of Stupidity

    "By creating a graph of Cipolla's two factors, we obtain four groups of people. Helpless people contribute to society but are...